জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারী জেন্ডার সমতার কয়েক দশকের অগ্রগতি বিনষ্ট করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘কর্মহীনতার উচ্চহার থেকে শুরু করে অবৈতনিক সেবার ব্যাপক বোঝা, স্কুল বিঘ্নিত হওয়া থেকে শুরু করে পারিবারিক সহিংসতা ও শোষণের ক্রমবর্ধমান সংকট পর্যন্ত নারীদের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও অধিকার হয়েছে বিঘ্নিত।’
‘মায়েরা –বিশেষ করে একক নারীপ্রধান পরিবারের মায়েরা – তীব্র উদ্বেগ এবং প্রতিকূলতার সম্মুখিন হয়েছে। এর পরিণতি মহামারী শেষ হওয়ার পরও বহুদিন চলতে থাকবে।’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে মহামারী মোকাবেলায় নারীগণ প্রথম সারির ভূমিকাও পালন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মহামারীর এই সময়ে তাঁরা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এবং অর্থনীতি, সম্প্রদায়সমূহ এবং পরিবারগুলোকে একত্রে ধরে রাখার জন্য অত্যাবশ্যক কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, তাঁরা সেইসব নেতাদের অংশীজন যাঁরা মহামারীর প্রসার হ্রাস করেছে এবং দেশগুলোকে এর ক্ষতি থেকে উত্তরণে ভূমিকা রেখেছে।
এ বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি নারীদের সমান অংশীদারিত্বের রূপান্তরকারী শক্তিকে তুলে ধরে। জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি জাতিসংঘে আমরা নিজেরাই অবলোকন করছি, এবং আমি গর্বিত যে আমরা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের উচ্চ নেতৃত্বে জেন্ডার সমতা অর্জন করেছি। এর প্রমাণ স্পষ্ট।’
নারী নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘নারী যখন সরকারে নেতৃত্ব দেয়, তখন আমরা সামাজিক সুরক্ষা এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বৃহত্তর বিনিয়োগ প্রত্যক্ষ করি।’
‘নারী যখন সংসদে অধিষ্ঠিত থাকে, তখন জাতি আরও কঠোর জলবায়ু নীতি গ্রহণ করে। নারী যখন শান্তির আলোচনায় অংশ নেয়, তখন চুক্তিগুলি আরও স্থায়ী হয়। এবং এখন যখন জাতিসংঘের শীর্ষ নেতৃত্বে নারীরা সমান সংখ্যায় কাজ করছেন, আমরা শান্তি, টেকসই উন্নয়ন এবং মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য আরও বেশি সংঘবদ্ধ পদক্ষেপ অবলোকন করছি ‘ -বলেন তিনি।
তবে জেন্ডার সমতা স্থাপনের জন্য পুরুষদের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে স্বীকার করে তিনি বলেন, পুরুষ-অধ্যুষিত সংস্কৃতির সাথে একটি পুরুষ-অধ্যুষিত বিশ্বে, জেন্ডার সমতা মূলত শক্তির একটি প্রশ্ন।
নারীদের সমান অংশগ্রহণকে এগিয়ে নিতে এবং দ্রুত অগ্রগতি অর্জনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কোটা স্থাপন করার জন্য আমি দেশসমুহ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন দপ্তরগুলোকে আহ্বান জানান তিনি।
মহামারী থেকে পুনরুদ্ধার হওয়ার সময় সমর্থন ও প্রণোদনা প্যাকেজগুলি অবশ্যই নারী এবং কন্যাশিশুদের লক্ষ্য করে তৈরীর পরামর্শ দেন তিনি, যার মধ্যে রয়েছে নারী মালিকানাধীন ব্যবসাসমূহ এবং সেবা ভিত্তিক অর্থনীতি।
মহামারী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আমাদের বর্জন ও অসমতার প্রজন্মকে পিছনে ফেলে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশ পরিচালনা, ব্যবসা অথবা যেকোন আন্দোলন হোক, নারী সবক্ষেত্রে এমন অবদান রাখছে যা সবার জন্য সহায়ক এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন করার জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আরো বলেন, ‘সকলের জন্য সমান ভবিষ্যত গড়ার এখনই সময়। সকলের কল্যাণের জন্য কাজটি করা সবার দায়িত্ব।’