Categories
National

ভাসানচর পুরোপুরি নিরাপদ, বাসযোগ্য

ভাসানচর পুরোপুরি নিরাপদ, বাসযোগ্য

নোয়াখালীর ভাসানচর দ্বীপকে পুরোপুরি নিরাপদ ও বাসযোগ্য বলে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে আজ শনিবার প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (সিএফআইএসএস) সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ ওই গবেষণা পরিচালনা করেছে।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল। সিএফআইএসএস চেয়ারম্যান কমোডর এম এন আবসার অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম। প্রধান গবেষক ড. মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে গবেষক দলটিতে ছিলেন ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহীনুর আলম ও মারিয়া হোসাইন।

গবেষকরা জানান, তাদের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভাসানচরের সামাজিক ও পরিবেশগত স্থায়িত্ব পর্যবেক্ষণ করা। গবেষণার তথ্য-উপাত্ত এবং ভূতত্ত্ববিদ, পরিবেশবিদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতামত বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখতে পেয়েছেন যে ভাসানচর একটি নতুন দ্বীপ হিসেবে পুরোপুরি বসবাসযোগ্য। এই দ্বীপে প্রতিষ্ঠিত স্থাপনা যেমন আধুনিক বাসস্থান, রাস্তা, আশ্রয়কেন্দ্র, বাঁধ দ্বীপকে টেকসই করেছে। নয় ফুট উঁচু বাঁধ ১৯ ফুট উঁচু করা হচ্ছে। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপটি ডুবে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বিশেষ করে, তিন স্তরের দুর্যোগ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্বীপটিকে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কবল থেকে রক্ষা করবে।

এছাড়া প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার থেকে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, ভাসানচরে কৃষিকাজ, সবজি চাষ, মাছ শিকারসহ আরো জীবন-জীবিকার সুযোগ-সুবিধা আছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, ধর্ম-কর্ম পালন ও বিনোদনের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। দুর্যোগে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার জন্য আধুনিক আশ্রয়কেন্দ্রও নির্মাণ করা হয়েছে।

ভাসানচরের বিপরীতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে বিদ্যমান বেশ কিছু সমস্যা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিশেষ করে শিবিরে মাদক ইয়াবা, অবৈধ অস্ত্র, পতিতাবৃত্তি, মানবপাচার, মাদকের বিস্তার ও কেনাকাটার তথ্য গবেষণায় স্থান পেয়েছে। এসব বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরকে কক্সবাজারের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ স্থান বলে গবেষকরা মনে করছেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে ভাসানচরকে আরো টেকসই করতে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
ভবিষ্যতে কোনো ধরনের পানির সংকট এড়াতে সেখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও দৈনন্দিন কাজে ওই পানি ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েদের তাদের নিজ ভাষায় পাঠদান এবং রোহিঙ্গাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালানোর ব্যবস্থা করার সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।

দরিদ্র রোহিঙ্গাদের আয়ের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে কিছু কুটির শিল্প স্থাপন এবং ভাসানচরের সম্ভাবনা নিয়ে আরো বিশ্লেষণের জন্য বিষয়ভিত্তিক গবেষণায় জোর দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

 

Categories
National

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ আজ

 

জনসমুদ্রে যেদিন জোয়ার এসেছিল

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার আহ্বান সংবলিত ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণের দিনটি এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জাতীয় দিবস উপলক্ষে আজ রবিবার সরকারিভাবে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান কর্মসূচি নিয়েছে।

এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ। লেখক ও ইতিহাসবিদ জ্যাকব এফ ফিল্ডের বিশ্বসেরা ভাষণ নিয়ে লেখা গ্রন্থে এই ভাষণ স্থান পেয়েছে। অসংখ্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ। এটি ইউনেসকোর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা গোটা দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গর্বের।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন। মহান এই নেতার সে স্বপ্নপূরণে আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প-২০২১’ ও ‘রূপকল্প-২০৪১’ ঘোষণা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর সন্ধিক্ষণে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমি দল-মত-নির্বিশেষে সকলকে নিজ-নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানাই।”

গতকাল শনিবার শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানান, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত জাতীয় দিবস হিসেবে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এই আয়োজন উদযাপনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক  সম্মেলন কেন্দ্রে আজ বিকেল ৩টায়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৭ই মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং আগামীকাল সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে।

Categories
National

মেয়েকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না মায়ের

মেয়েকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না মায়ের

মেয়েকে চিকিৎসা করিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না মায়ের। রাজধানীর গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় যাত্রীবাহী বাসচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন ওই মা। নিহতের নাম পারভীন বেগম (৪০)। রবিবার (৭ মার্চ) দুপুরে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

দুর্ঘটনার পর মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

মৃতার মেয়ে সুরাইয়া (১৮) জানান, মুন্সীগঞ্জের গাড়িতে ওঠার জন্য দু’জনে রাস্তা পারাপারের সময় যাত্রীবাহী বাস মল্লিক পরিবহনের চাপা পড়ে মা পারভীন গুরুতর আহত হন। আমি একটু পেছনে ছিলাম আমার কোনো কিছু হয়নি। পরে তাকে মেডিক্যালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের স্বামী আব্দুল বাছের জানান, সুরাইয়া (মেয়ে) অসুস্থ। তার মা পারভীন তাকে নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে চিকিৎসা করিয়ে একটি বাসে করে গুলিস্তান নামেন। গুলিস্তান থেকে আরেকটি বাসে করে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন বলে গোলাপশাহ মাজারের পাশ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় এন মল্লিক ও আরাম নামে দুই বাসের চাপায় পারভীন বেগম গুরুতর আহত হন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে সঙ্গে থাকা মেয়ে সুরাইয়ার কিছু হয়নি।

 

Categories
National

২৫ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি করবে সরকার

২৫ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি করবে সরকার

আসন্ন রমজানে তেলের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) মাধ্যমে ২৫ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি করবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। একইসঙ্গে তিনি রমজানে অতিরিক্ত কেনাকাটা না করার আহ্বান জানান।

রবিবার (৭ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়র সম্মেলনকক্ষে সফররত ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগের সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদসম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রমজানের সময় আমাদের বাজারে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এজন্য আমরা টিসিবির মাধ্যমে ২৫ হাজার মেট্রিকটন ভোজ্য তেল আমদানি করতে যাচ্ছি। যাতে করে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো যেতে পারে। সব রকম ব্যবস্থাই আমরা নিয়েছি। তবে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়াটাই জরুরি অনেক খানি।

তিনি বলেন, কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করা যায় না। যেমন ভোজ্য তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ তেল আমদানি করতে হয়। এ বাজারটা আমাদের ওপর না। আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা আমদানির দামে ওপর একটা সর্বজনীন যে দামটা মানবে সে রকম একটা দাম নির্ধারণ করে দেই সেটা হলো তেলে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে রিজেনেবল প্রাইজে আনা যেতে পারে। আর কিছু জিনিস আমাদের রয়েছে যেগুলো রমজানের পণ্য। যেমন ছোলা, খেজুর, ডাল এসব জিনিস আমদানি করতে হয়। এগুলো টিসিবির মাধ্যমে অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ আমদানি করা হচ্ছে। সব কিছু বুক করা হয়ে গেছে। আশা করছি, সব কিছু এসে যাবে। রমজানের সময় আমাদের সমস্যা যেন না হয়, সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

Categories
National

নারীর সাহসী অগ্রযাত্রা

নারীর সাহসী অগ্রযাত্রা
গত বছরের এপ্রিলে যখন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছিল তখন চাকরি হারান জেবুনেসা খাতুনের স্বামী আসগর আলী। বহু চেষ্টা করেও আরেকটি চাকরি জোটাতে পারছিলেন না তিনি। এমন দিশাহারা অবস্থায় একদিন সড়ক দুর্ঘটনায় একটা পা ভেঙে অচল হয়ে পড়েন আসগর আলী। বৃদ্ধ শাশুড়ি, পঙ্গু স্বামী, সাত ও চার বছরের দুই মেয়ে নিয়ে গৃহিণী জেবুনেসার জীবনযুদ্ধ শুরু হয় তখন। ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে রুটি, পরোটা বানিয়ে, সবজি রান্না করে সকাল ৬টায় ঠেলা গাড়ি নিয়ে বাড়ির সামনে গিয়ে বসেন। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিঙাড়া, সমুচা ও চটপটি তৈরি করে একইভাবে বিক্রি করেন। এত ব্যস্ততার পরও ঘরে বসে সেলাই মেশিনে আশপাশের বাড়ি ও পরিচিতজনদের পোশাক সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি।

খুলনা শহরের বাগমারা এলাকার বাসিন্দা জেবুনেসাই শুধু সংকটে সংসারের হাল ধরেছেন তা নয়। দেশের বহু নারীই তাঁর মতো সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে টিকে থাকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এক দশক আগেও গ্রামে নারীদের আয়ের উৎস ছিল মূলত হাঁস-মুরগি পালন বা কাঁথা সেলাই করা। আর শহরে নারীরা স্কুলে শিক্ষকতা, টিউশনি বা ঘরে বসে মেশিনে কাপড় সেলাই করে আয় করতেন। দিন বদলেছে, এখন নারীরা ঘরে-বাইরে সমানতালে কাজ করছেন। সংসারের খরচ জোগাড়ে অনেক নারীর আয় এখন অপরিহার্য। নারীর এগিয়ে চলার সাহস বেড়েছে।

প্রায় ৯ দশক আগে ‘অবরোধবাসিনী’দের দুঃখগাথা রচনা করেছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। দেখিয়েছিলেন কিভাবে আশৈশব অন্ধকার গৃহকোণে জীবন কাটিয়ে ‘অবরোধ প্রথার সম্মান’ দিয়েছেন এ দেশের নারীরা। ‘অন্ধ বোরকায়’ আপাদমস্তক ঢেকে পরিচারিকার পাহারায় ৯ বছরের শিশুর স্কুলে যাওয়া, বিয়ের আগে বালিকা কনেকে ‘মাইয়াখানা’য় বন্দি রাখা, মোটা কাপড়ে মোড়া পালকির মধ্যে ‘মালগাড়ি’তে নারীর ট্রেন ভ্রমণের সেই অন্ধকার ইতিহাস পেছনে ফেলে বেগম রোকেয়ারই ‘সুলতানার স্বপ্ন’র পথে হাঁটছে নারী, নেতৃত্ব দিচ্ছে রাজনীতি, প্রশাসনসহ সব অঙ্গনে।

দেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের বিরোধী নেতা নারী। নারীরা এখন বন্দুক কাঁধে যুদ্ধ করছেন, বিমান চালাচ্ছেন, পাহাড়ে উঠছেন। শিক্ষকতা, চিকিৎসা, সাংবাদিকতা, আইন পেশা কোথায় নেই নারী। রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ৭০ শতাংশ কর্মীই নারী। নারীরা গড়ে তুলছেন নতুন শিল্প-কারখানা। মাটি কাটছেন, ইট ভাঙছেন, জমিতে ফসলও বুনছেন। গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রশাসনে নারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নারী। করপোরেট হাউস, ব্যাংক ও গবেষণায় নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী  পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রায় ২৫ বছর পর সিপিডির প্রথম  নারী নির্বাহী পরিচালক হিসেবে আমি দায়িত্ব পাই। নারীর বাধা আছে। তবে দিন দিন তা কমছে।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে নারীদের অবস্থান ভালো। বাধা আছে, তবে তার মধ্যে নারী এগিয়ে চলেছে।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক নীনা গোস্বামী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের নারীদের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বেড়েছে। বিশেষভাবে কৃষি ও তৈরি পোশাক শিল্পে, উদ্যোক্তা হিসেবে নারীরা অবদান রাখছে। কম্পিউটার, প্রযুক্তি খাতেও আগ্রহী হচ্ছে।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুসারে, পাঁচ বছর আগে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ছিল এক কোটি ৬০ লাখ। সেটি বেড়ে হয়েছে এক কোটি ৮৩ লাখ।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ৬২ শতাংশ নারী আয়বর্ধক কাজে যুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ায় এটি সর্বোচ্চ হার।

বাংলাদেশের নারীর এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণায়ও।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ২০২০ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের নারীর অগ্রগতি বা পিছিয়ে পড়ার তুলনা করা হয়েছে। ২০০৬ সালে প্রকাশিত সংস্থাটির প্রথম প্রতিবেদনের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে সেই চিত্র তুলে ধরা হয়। ফোরামের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চারটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক নম্বর অবস্থানে আছে। এগুলো হচ্ছে মেয়েদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় তালিকাভুক্তি, জন্মের সময় ছেলে ও মেয়ে শিশুর সংখ্যাগত সমতা এবং রাষ্ট্রের নেতৃত্বে নারী। তবে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ এবং স্বাস্থ্য ও আয়ুসহ আরো কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নারী-পুরুষের সমতা : ডাব্লিউইএফের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, নারী-পুরুষের সমতার দিক থেকে বিশ্বের ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ৫০তম। নারী-পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ এক দশকে ২০ ধাপ এগিয়েছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান বাংলাদেশের। ২০১৭ সালে বিশ্বের ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৭২তম স্থানে ছিল। ২০০৬ সালে ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম।

রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন : ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ৭ নম্বরে রাখা হয়েছে। ২০০৬ সালে ছিল ১৭তম স্থানে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের তিনটি উপসূচকের মধ্যে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৬তম এবং নারী মন্ত্রীর সংখ্যার দিক থেকে ১২৪তম। নারী সরকার প্রধানের দিক দিয়ে বিশ্বসেরা হয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান জাতীয় সংসদের ৩০০ সাধারণ আসনে নির্বাচিত নারী সদস্যের সংখ্যা ২৩। এ ছাড়া সংরক্ষিত আসনে রয়েছেন আরো ৫০ জন। জাতীয় সংসদের স্পিকারও একজন নারী।

শিক্ষায় মেয়েরা : ফোরামের ওই প্রতিবেদন মতে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণে সব দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ড. রাশেদা কে. চৌধূরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়লেও উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ এখনো আশানুরূপ নয়।’

অন্যান্য ক্ষেত্রে : বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সারা দেশে নিম্ন আদালতে এক হাজার ৮৫০ জন বিচারকের মধ্যে নারী ৫৫০ জন। সুপ্রিম কোর্টের ৯৯ জন বিচারপতির মধ্যে নারী সাতজন। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর দীর্ঘমেয়াদি নিয়মিত কোর্সে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তা ও সৈনিকের সংখ্যা আনুমানিক তিন হাজার ৭০০। নৌবাহিনীতে নারী কর্মকর্তা রয়েছেন মোট ১১৬ জন। তাঁরা সর্বোচ্চ কমান্ডার পদে কর্মরত। বিমানবাহিনীতে নারী সদস্য ২৯৫ জন। বাংলাদেশ পুলিশে নারী সদস্যসংখ্যা ১৪ হাজার ৪৮০, যা মোট জনবলের ৭.৫৫ শতাংশ। অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিশনাল ডিআইজি) হিসেবে কর্মরত আছেন পাঁচজন নারী। প্রশাসন ক্যাডারে সরকারের সচিব পদে আটজন, সচিব পদমর্যাদায় দুজন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৭১ জন, মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে সাতজন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে ৩৯ জন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে ১৩৯ জন নারী কর্মরত।

প্রতিবন্ধকতা এখনো আছে : এখনো অনেক পরিবারে মেয়ের চেয়ে ছেলেকে সুবিধা বেশি দেওয়া হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানে বেশি কাজ করেও নারীকে বেতনসহ বিভিন্ন সুবিধা কম দেওয়া হয়। নারীকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করার মূল্যবোধ বিস্তৃত হয়নি। এখনো এ দেশে নারীকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়। এক গবেষণায় দেখা যায়, পুরুষরা দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ জমির মালিক, বাকি মালিকানা নারীদের। পার্বত্য অঞ্চলের নারীরা জুম চাষ করলেও ভূমির মালিকানা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। পারিবারিক শ্রমের ব্যাবহারিক মূল্য দেওয়া হলেও অর্থনৈতিক মূল্য এখনো স্বীকৃত নয়। মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপি) তা ধরা হয় না। নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করে দেশের এমন একাধিক সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ নারী স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়। এ ছাড়া ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক নির্যাতন, ৫৩ শতাংশ অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘এখনো আমাদের দেশে নারীদের অনেকে হেয় করে। নারী নির্যাতন ও সহিংসতা এখনো আছে। নারী নির্যাতন বন্ধ করতে যেসব আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশ সই করেছে, তার সব ধারা কার্যকর করতে হবে। এ জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করতে হবে।’

মন্তব্য